একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
“থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে দেখবো এবার জগৎটাকে।” 
–নজরুল

ভূমিকা : 

ভ্রমণের নেশা মানুষের চিরন্তন। সুদূরের আহ্বান আসে তার কাছে। ডাকে অরণ্য, পর্বত, সমুদ্র। এক দুর্বার আকর্ষণ অনুভূত হয় হৃদয়ে। ‘হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে।’ সেই টান, সেই আকর্ষণ আমারও হৃদয়ে জেগে ওঠে বারবার। ছোটোবেলা থেকেই বাবা-মায়ের হাত ধরে কাছে – দূরে নানা স্থানে গিয়েছি ভ্রমণে, তবে আমার কাছে সব থেকে আকর্ষণীয় হয়েছে হরিদ্বার-বদরীনাথ ভ্রমণ।

যাত্রার শুরু দিল্লি থেকে হরিদ্বারের পথে : 

হাওড়া স্টেশন— লোকে লোকারণ্য। বেশিরভাগ লোকই ছুটি কাটানোর আমেজে মশগুল। আমাদের গন্তব্য ছিল হাওড়া থেকে দিল্লি, সেখান থেকে হরিদ্বার যাত্রা। দিল্লি থেকে হরিদ্বারের যাত্রাপথ ছিল। বড়োই আকর্ষণীয়। ছুটে চলেছে ট্রেন। জানলার ফাঁক দিয়ে দূর আকাশের পানে ছুটে যায় চোখ; কিন্তু সামনেই তো পাহাড় ঘেরা। আবার হঠাৎ এক অন্য মনোরম আকর্ষণীয় দৃশ্য। এমনি করে চলতে চলতে দেখতে দেখতে ট্রেন এসে পৌঁছালো হরিদ্বারে। স্টেশনে নেমে আমরা গেলাম ‘মাণ্ডি গোবিন্দাশ্রম’ ধর্মশালায়। নির্দিষ্ট ঘরে সামান্য বিশ্রাম করে দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

সন্ধ্যায় হরকোপৌড়ির দৃশ্য : 

মন কিন্তু পড়ে আছে অন্য জায়গায়। সন্ধ্যায় হরিদ্বারের গঙ্গার ঘাটে অর্থাৎ হরকোপৌড়ি গঙ্গা-আরতির দৃশ্যাবলি দেখার জন্য। হ্যাঁ, এ-এক অনুপম সন্ধ্যা-আরতির দৃশ্য। এক শব্দ, এক সংগীতের ধ্বনি ভেসে আসে গঙ্গার বুক থেকে। সে ধ্বনি যেন স্বর্গীয় পরিবেশের এক মায়াময় জগৎ তৈরি করছে। চোখে না দেখলে সে দৃশ্য বর্ণনা করা যায় না। গঙ্গার জলে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যাওয়া প্রদীপের মৃদু আলোর সৌন্দর্য-অপূর্ব। তার সঙ্গে মন্দিরের কাঁসর-ঘণ্টার শব্দ যেন এক মোহময় স্বর্গীয় পরিবেশ।

বদরীনাথের পথে গমন : 

হৃষিকেশের মন্দির, লছমনঝোলার মন্দির দেখে সেখানে এক রাত কাটিয়ে আমরা রওনা দিয়েছিলাম বদরীনাথের উদ্দেশ্যে। পার্বত্য পথ দুর্গম, কিন্তু এর অভিজ্ঞতা অত্যন্ত রোমা কর। চড়াই-উতরাই করতে করতে বাস এগিয়ে চলেছে। যাত্রাপথে সঙ্গী হয়েছে অলকানন্দা। শুনছি তার কুলকুল ধ্বনি। এর আগে দার্জিলিং-এ কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়াময় রূপ আমার চোখে ধরা পড়েছে, কিন্তু বদরীনাথের পথে পর্বতের রূপ যেন ভিন্নধর্মী। যাত্রাপথে দেবপ্রয়াগ, কর্মপ্রয়াগ ও রুদ্রপ্রয়াগ পার হয়ে এসেছি। এগুলি এক-একটি নদীর মিলনস্থল। আমরা প্রতিটি প্রয়াগে নেমে গঙ্গার পূত ধারার স্পর্শ নিলাম। পৌঁছালাম পিপিলকোর্ট নামে এক জায়গায়। রাত্রিবাস সেখানেই।

অলকানন্দার রোমাঞ্চকর পরিবেশ : 

পরদিন সকালে আবার যাত্রা করলাম এক ভিন্ন স্বাদের কৌতূহল নিয়ে। শোনা যাচ্ছে অলকানন্দার গুরুগম্ভীর ধ্বনি। হাজার-হাজার ফুট খাদ পাশে। কিন্তু বুকে ভয়, মনে বল, চোখে অদেখাকে দেখার তৃষ্ণা নিয়ে চলেছি। চলতে চলতে পৌঁছালাম বদরীনাথের নারায়ণ মন্দিরে।

তুষারাবৃত বদরীনাথের নারায়ণ মন্দির : 

প্রকৃতির এমনই কৃপা যে বদরীনাথের মন্দিরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেল তুষারপাত। মন্দির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময় ফুলের সঙ্গে আমাদের হাত বরফে পূর্ণ হয়ে গেল। এক অলৌকিক স্বর্গীয় পরিবেশ।

উপসংহার : 

এবার ফিরে আসার পালা। ছুটি শেষের পথে। আমরা ফিরে এলাম হরিদ্বারে। এখান থেকেই ট্রেনে ফিরতে হবে। কয়েকটা দিনের স্মৃতি চিরদিনের মতো মনে গেঁথে নিলাম। ভ্রমণ মানুষের মনের শক্তি, প্রেরণা। এ এক অন্য তৃপ্তির স্বাদ। আমার মনের মণিকোঠায় চির অম্লান হয়ে থাকবে এই স্বর্গীয় পরিবেশের রোমাঞ্চকর সমস্ত দৃশ্যের অভিজ্ঞতা।

Leave a Comment