হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ গুলি আলোচনা করো

হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ গুলি আলোচনা করো
হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ গুলি আলোচনা করো

ভূমিকা : 

হরপ্পা সভ্যতার সৃষ্টির মতো পতনের ইতিহাসও রহস্যাবৃত। কী কী কারণে, কীভাবে এই সভ্যতার পতন ঘটেছে তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্কের অন্ত নেই। তাঁরা হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত নিদর্শনগুলি পরীক্ষা করে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী বিভিন্ন কারণকে দায়ী করেছেন। কিছু যুক্তি থাকলেও কোনো একটি কারণকে অনিবার্য বলে ধরে নেওয়া ঠিক নয়। সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। নীচে হরপ্পা সভ্যতার পতনের সম্ভাব্য কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করা হল –

হরপ্পা সভ্যতার পতনের কারণ

i. নাগরিক অবক্ষয় : 

হরপ্পা সভ্যতার নাগরিক জীবনের অবক্ষয় তার পতনের পথকে প্রশস্ত করেছিল। এই অবস্থাটি ঘটেছিল দীর্ঘদিন ধরে। এই অবক্ষয়ের প্রভাবে নীচের স্তরের অপেক্ষা উপরের স্তরের রাস্তাগুলি সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। কৃষিকাজ, ব্যাবসাবাণিজ্যের অবনতি ঘটে। ফলে এই সভ্যতার পতন ঘটে।

ii. রক্ষণশীলতা : 

হরপ্পা সভ্যতার মানুষের রক্ষণশীল মানসিকতা পতনের অন্যতম কারণ ছিল। তারা কোনো কিছু নতুন বিষয় শিখতে চাইত না। ফলে কৃষিক্ষেত্র, হাতিয়ার তৈরি প্রভৃতি বিষয়ে তারা পিছিয়ে পড়ে।

iii. জলবায়ুর পরিবর্তন : 

এক সময়ে হরপ্পা সভ্যতায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হত। এলাকাটি ছিল বনজঙ্গলে ভরা। নগর সভ্যতার প্রসারের ফলে ইট পোড়াবার কাজে প্রচুর গাছপালা কেটে ফেলা হয়। ফলে সমগ্র এলাকাটি বনশূন্য হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে মরুভূমি সমগ্র এলাকাটি গ্রাস করে ফেলে। সমগ্র এলাকাটি জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে।

iv. সিন্ধু নদের গতিপথের পরিবর্তন : 

সিন্ধু ও তার উপনদীগুলি গতিপথ পরিবর্তন করলে এই সভ্যতার পতন ঘটে। সিন্ধু নদ গতিপথ পরিবর্তন করলে মহেন-জো-দারো ও তার পার্শ্ববর্তী স্থানগুলির জলের অভাবে কৃষিব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সেখানকার অধিবাসীরা নগর ত্যাগ করে অন্যস্থানে চলে যায়।

V. বন্যা : 

রাইকস, ডেলম্, আরনেস্ট ম্যাকে, এম আর রাও, এম আর সাহানী প্রমুখ ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে সিন্ধু নদের প্রবল বন্যার ফলেই এই সভ্যতার পতন ঘটে। বাঁধ নির্মাণে সিন্ধুবাসী দীর্ঘদিন অবহেলা করে। এর ফলে বর্ষার সময় দু-কূল ছাপিয়ে বন্যা হত। এই বন্যার ফলে হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটে।

vi. ভূমিকম্প : 

অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটে। সিন্ধু উপত্যকার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল। ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নরকঙ্কালগুলি সৎকারহীনভাবে পড়ে থাকা ভূমিকম্পের তত্ত্ব সমর্থন করে। কিন্তু এই ভূমিকম্পের কারণটি মহেন-জো-দারোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও অন্য নগরগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

vii. বহিঃশত্রুর আক্রমণ : 

বিভিন্ন কারণে হরপ্পা সভ্যতা যখন দুর্বল হয়ে পড়েছিল তখন শক্তিশালী কোনো জাতির আক্রমণে হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটে। হরপ্পা সভ্যতার পতনের সময় 1500 খ্রিস্টপূর্বাব্দ। আবার আর্যদের ভারতে আগমনের সময়ও 1500 খ্রিস্টপূর্বাব্দ। তাই অনুমান করা হয় আর্য জাতির আক্রমণেই হরপ্পা সভ্যতার পতন হয়। অনেক নরকঙ্কালের খুলিতে ভারী অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। আবার ঋগবেদে ইন্দ্রকে পুরন্দর অর্থাৎ নগরের ধ্বংসকারী বলা হয়। ইন্দ্রের এই অভিধা হরপ্পার পতনের জন্য আর্য জাতির আক্রমণের দাবিকে আরও জোরালো করে ।

মূল্যায়ন : 

উপরোক্ত আলোচনার পর বলতে পারা যায় যে হঠাৎ করে একদিনে বা একটি বিশেষ কারণে হরপ্পা সভ্যতার পতন ঘটেনি। দীর্ঘ অবক্ষয়ের পর হরপ্পা সভ্যতা দুর্বল হয়ে পড়লে বহিরাগত কোনো জাতির আক্রমণে এই সভ্যতার পতন ঘটে।

Leave a Comment