ষোড়শ মহাজনপদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ষোড়শ মহাজনপদের বিবরণ দাও।

ষোড়শ মহাজনপদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ষোড়শ মহাজনপদের বিবরণ দাও।
ষোড়শ মহাজনপদের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। ষোড়শ মহাজনপদের বিবরণ দাও।

ষোড়শ
মহাজনপদের বৈশিষ্ট্য

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতবর্ষে ষোলোটি বড়ো রাষ্ট্রের বা রাজ্যের উদ্ভব
হয়। এই রাজ্য বা
রাষ্ট্রগুলিকে একত্রে ষোড়শ মহাজনপদ বলা হয়। এই মহাজনপদগুলির কতকগুলি
সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল

i. অবস্থানগত

ষোড়শ মহাজনপদের মধ্যে একমাত্র অস্মক দক্ষিণ ভারতে গোদাবরী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। বাকি পনেরোটি মহাজনপদ উত্তর ভারতে অবস্থিত ছিল।

ii. রাজতান্ত্রিক

ষোলোটি মহাজনপদের মধ্যে চোদ্দোটি মহাজনপদ ছিল রাজতান্ত্রিক। বৃজি মল্ল নামে
দুটি মহাজনপদ ছিল প্রজাতান্ত্রিক।

iii. পারস্পরিক
সংঘর্ষ

ষোলোটি মহাজনপদ সর্বদা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে বা যুদ্ধে রত
থাকত। নিজ নিজ আধিপত্য স্থাপন করার জন্য মহাজনপদগুলি দুর্বল মহাজনপদটিকে পরাজিত করে নিজেদের আয়তন শক্তি বৃদ্ধি
করত। এর ফলে একাধিক
মহাজনপদ নিয়ে আরও বৃহৎ আকারের জনপদ বা রাষ্ট্রের উদ্ভব
হয়। যেমনমগধ, কোশল, বৎস অবন্তী।

iv. বিদেশি
আক্রমণকারীকে সহায়তা

প্রতিবেশী মহাজনপদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক এমনই তিক্ত ছিল যে, কোনো বিদেশি আক্রমণকারী প্রতিবেশী মহাজনপদ আক্রমণ করলে তারা বিদেশি আক্রমণকারীকে সাহায্য করত।

v. চারটি
বৃহৎ মহাজনপদের সৃষ্টি

অবিরাম সংগ্রামের ফলে দুর্বল মহাজনপদগুলির পতন হয়। মগধ, অবন্তী, বৎস, কোশলএই চারটি মহাজনপদ
প্রথম পর্বে লড়াই জয়ী হয়ে
প্রাধান্য স্থাপন করে।

vi. মগধের
প্রাধান্য

সংঘর্ষের চূড়ান্তপর্বে মগধ অন্য তিনটি মহাজনপদকে পরাজিত করে নিজ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে মগধ সমগ্র উত্তর ভারতে আধিপত্য স্থাপন করে। এইজন্য ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার এই সময়কে ‘Age of Imperial Unity’ বলেছেন।

ষোড়শ
মহাজনপদের বিবরণ

হিন্দু পুরাণ, বৌদ্ধ জাতক অঙ্গুত্তরনিকায়, জৈন ভগবতী
সূত্র থেকে আমরা ষোলোটি মহাজনপদের নাম জানতে পারি। উত্তরপশ্চিমের কাবুল নদীর তীর থেকে দক্ষিণের গোদাবরী নদীর তীরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই মহাজনপদগুলি অবস্থিত
ছিল। এই মহাজনপদগুলি হল

i. কাশী

কাশী মহাজনপদটি বর্তমান উত্তরপ্রদেশের পূর্বভাগে অবস্থিত ছিল। এর রাজধানীর নাম
বারাণসী।

ii. কোশল

বর্তমান অযোধ্যাতে কোশল মহাজনপদটি গড়ে ওঠে। এর রাজধানীর নাম
শ্রাবস্তী।

iii. অঙ্গ

বর্তমান বিহার রাজ্যের দক্ষিণপূর্বে অঙ্গ অবস্থিত ছিল। এর রাজধানীর নাম
ছিল চম্পা নগরী।

iv. মগধ

বিহারের পাটনা গয়া জেলা
নিয়ে মগধ মহাজনপদটি গঠিত হয়। এর প্রথম রাজধানী
ছিল গিরিব্রজ বা রাজগৃহ
পরে পাটলিপুত্রে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়।

v. কুরু

বর্তমান দিল্লি তার পার্শ্ববর্তী
এলাকাতে কুরু জনপদটি অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী ছিল
ইন্দ্রপ্রস্থ।

vi. পাঞ্চাল

বর্তমান রোহিলাখণ্ডে পাঞ্চাল জনপদটি অবস্থিত ছিল। পাঞ্চালের দুটি রাজধানী ছিল। উত্তর পাঞ্চালের রাজধানী ছিল অহিচ্ছত্র, দক্ষিণ পাঞ্চালের রাজধানী ছিল কাম্পিলা।

vii. অবন্তী

অবন্তী জনপদটি বর্তমান মধ্যপ্রদেশ মালবের কিছু
অংশ জুড়ে। উজ্জয়িনী ছিল উত্তরাংশের রাজধানী এবং মাহিষ্মতী ছিল দক্ষিণাংশের রাজধানী।

viii. বৎস

বৎস অবস্থিত ছিল বর্তমান এলাহাবাদের কাছে গঙ্গানদীর দক্ষিণ তীরে। এর রাজধানী ছিল
কৌশাম্বী।

ix. বৃজি

বর্তমান উত্তর বিহারে বৃজি অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী ছিল
বৈশালী।

x. মল্ল

মল্ল রাজ্যটি অবস্থিত ছিল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলায়। এর রাজধানীর নাম
ছিল কুশীনগর।

xi. চেদি

চেদি অবস্থিত ছিল বুন্দেলখণ্ড তার পার্শ্ববর্তী
অঞ্চলে। এর রাজধানীর নাম
ছিল শুক্তিমতি।

xii. মৎস

মৎস রাজ্যটি অবস্থিত ছিল বর্তমান গুজরাটের জয়পুরে। বিরাটনগর ছিল এর রাজধানী।

xiii. অস্মক

দক্ষিণ ভারতের গোদাবরী উপত্যকাতে অস্মক রাজ্যটি গড়ে ওঠে। এর রাজধানীর নাম
পোটালি বা পোটান।

xiv. সুরসেন

মথুরা অঞ্চলে সুরসেন অবস্থিত ছিল যমুনা নদীর তীরে। এর রাজধানীর নাম
মথুরা।

xv. গান্ধার

বর্তমান রাওয়ালপিণ্ডি কাশ্মীর উপত্যকাতে
গান্ধার রাজ্যটি অবস্থিত ছিল। এর রাজধানী ছিল
তক্ষশীলা।

xvi. কম্বোজ

বর্তমান দক্ষিণপশ্চিম কাশ্মীরে কম্বোজ অবস্থিত ছিল। এর রাজধানীর নাম রাজপুর।

Leave a Comment