ঋতুচক্রের পরিচয় দাও |
বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত – এই চারটি ঋতু পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে ও চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে, একে ঋতুচক্র বলে।
• বসন্তকাল:
21 মার্চ পৃথিবী তার কক্ষপথের এমন অবস্থানে আসে যে পৃথিবীর উভয় গোলার্ধ সূর্য থেকে সমদূরত্বে অবস্থান করে এবং সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পতিত হয়। এই দিন উভয় গোলার্ধের সর্বত্র দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল হয় ।
• গ্রীষ্মকাল:
21 মার্চের পর থেকে পৃথিবী ধীরে ধীরে এমন অবস্থায় আসে যে সূর্যরশ্মি ক্রমশ উত্তর গোলার্ধে লম্বভাবে পড়তে থাকে এবং উত্তর গোলার্ধে ক্রমশ দিন বড়ো ও রাত্রি ছোটো হতে থাকে। এরপর 21 জুন সূর্যকিরণ কর্কটক্রান্তিরেখার (উত্তরায়ণের শেষ সীমা) ওপর লম্বভাবে পড়ে বলে উত্তর গোলার্ধে দিনের পরিমাণ বেশি হয়। একে বলা হয় সূর্যের উত্তর অয়নান্ত দিবস বা কর্কটসংক্রান্তি। দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক এর বিপরীত অবস্থা ঘটে। এই সময়টাতে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল অনুভূত হয়।
• শরৎকাল:
21 জুনের পর থেকে সূর্যের দক্ষিণায়ন শুরু হয় এবং পৃথিবী নিজস্ব কক্ষপথে এগিয়ে যাওয়ার ফলে উত্তর গোলার্ধ ক্রমশ সূর্যের দূরবর্তী ও দক্ষিণ গোলার্ধ ক্রমশ সূর্যের নিকটবর্তী হতে থাকে। এইভাবে 23 সেপ্টেম্বর পৃথিবীর উভয় গোলার্ধ আবার সূর্য থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে এবং সূর্যরশ্মিতে নিরক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পতিত হয়। এই দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল দেখা যায়।
• শীতকাল:
23 সেপ্টেম্বরের পর থেকে পৃথিবী ধীরে ধীরে কক্ষপথের এমন অবস্থায় আসে যখন সূর্যরশ্মি ক্রমশ দক্ষিণ গোলার্ধে লম্বভাবে পড়তে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ক্রমশ দিন বড়ো ও রাত্রি ছোটো হতে থাকে। এভাবে চলতে চলতে 22 ডিসেম্বর সূর্যকিরণ মকরক্রান্তিরেখার (দক্ষিণায়নের শেষসীমা) ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড়ো এবং রাত্রি সবচেয়ে ছোটো হয়ে থাকে (14 ঘণ্টা দিন ও 10 ঘণ্টা রাত্রি)। তাই 22 ডিসেম্বরকে বলা হয় দক্ষিণ অয়নান্ত দিবস বা মকরসংক্রান্তি। উত্তর গোলার্ধের অবস্থা হয় ঠিক এর বিপরীত। এই সময়টাতে উত্তর গোলার্ধে শীতকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল অনুভূত হয়। তারপর থেকেই আবার পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের নিকটবর্তী হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। 21 মার্চ আবার পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রি সমান হয়ে যায়। এভাবে একটি ঋতুচক্র সম্পন্ন হয়।