ঋতুপরিবর্তন হয় কেন |
পৃথিবীর তাপের উৎস হল সূর্য। সূর্যরশ্মি কোথায়, কত সময় ধরে এবং কীভাবে পড়ছে, তার ওপর ঋতুপরিবর্তন নির্ভর করে। পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে- পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য উত্তাপের হ্রাস-বৃদ্ধি হয়, পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে মেরুরেখার 66½° কৌণিক অবস্থানের ফলে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে সূর্যরশ্মি লম্ব ও তির্যকভাবে পড়ে। এর ফলে উত্তাপের পরিবর্তন হয়। প্রধানত এই দুটি কারণে পৃথিবীতে ঋতুপরিবর্তন হয়।
• দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য উত্তাপের হ্রাস-বৃদ্ধি :
(i) পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতি, (ii) উপবৃত্তাকার কক্ষপথ, (iii) আবর্তন ও পরিক্রমণ গতি, (iv) অক্ষ, কক্ষতলের সঙ্গে কৌণিক অবস্থান প্রভৃতি কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। সূর্য যখন পৃথিবীর যে গোলার্ধে অবস্থান করে, তখন সেই গোলার্ধে সূর্যরশ্মি অপেক্ষাকৃত লম্বভাবে পড়ে। ফলে, দিন বড়ো ও রাত্রি ছোটো হয়। বিপরীত গোলার্ধে ঠিক এর বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়। দিনেরবেলা পৃথিবীপৃষ্ঠ সূর্য থেকে যে তাপ গ্রহণ করে, ওই তাপে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় এবং রাত্রে পৃথিবী পৃষ্ঠ ওই তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়। যদি (a) দিন বড়ো ও রাত্রি ছোটো হয়, তবে বড়ো দিনে ভূপৃষ্ঠ যে তাপ গ্রহণ করে, ছোটো রাতে তা পুরোটা বিকিরণ করতে না পারায় তাপ সঞ্চিত হয়ে আবহাওয়া উম্ন হয় এবং গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে, (b) দিন ছোটো ও রাত্রি বড়ো হলে দিনেরবেলা গৃহীত তাপের পুরোটাই বড়ো রাতে বিকীর্ণ হয়ে ঠান্ডা অনুভূত হয় এবং শীতকালীন আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়।
• ভূপৃষ্ঠে লম্ব ও তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মির জন্য উত্তাপের পরিবর্তন :
(i) পৃথিবীর গোলীয় আকৃতি এবং (ii) অক্ষ, কক্ষের সঙ্গে 661/2° কোণে অবস্থানের কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারাবছর প্রায় লম্বভাবে এবং মেরু অঞ্চলে তির্যকভাবে পড়ে। (a) লম্বভাবে পতিত সূর্যকিরণ বায়ুস্তরকে সোজাসুজি ভেদ করে পৃথিবীর ওপর খুব কম স্থানে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল বেশি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং আবহাওয়ায় গ্রীষ্মের ভাব স্পষ্ট হয়। (b) অন্যদিকে, তির্যকভাবে পতিত সূর্যকিরণ বেশি বায়ুস্তর ভেদ করে আসে এবং ভূপৃষ্ঠের ওপর বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে বলে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল কম উত্তপ্ত হয় এবং আবহাওয়ায় শীতের ভাব অনুভূত হয়।